শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১২ পৌষ ১৪৩২ | ৭ রজব ১৪৪৭

  • নিউজ ডেস্ক

    প্রকাশ :- ২০২৫-১২-২৭, | ১১:৫৭:৪৯ |
শীত মৌসুম শুরু হতেই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে নবজাতক ও শিশুরা। শুষ্ক আবহাওয়া, বাড়তে থাকা বায়ুদূষণ ও ধুলাবালির কারণে শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ মৌসুমি নানা অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের বাড়তি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকদের মতে, এ সময় প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং অ্যালার্জিজনিত জটিলতা এখন শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে।


রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের নিউমোনিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে একটি শয্যাও খালি নেই। প্রতিদিন বহির্বিভাগে শত শত শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে। চিকিৎসকরা জানান, প্রাথমিক চিকিৎসার পর অনেক শিশুকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এবং অবস্থার অবনতি হলে ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা নিলে অনেক মৌসুমি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।


হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২৬১ জন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৬৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। একই সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ১৫৭ জন শিশু। এছাড়া সাধারণ সর্দি-কাশিতে ৮১৬ জন এবং হাঁপানিতে ১২১ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে।

হাসপাতালটিতে শুধু ২৩ ডিসেম্বর একদিনেই বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ১ হাজার ২৩৪ জন শিশু। এর মধ্যে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা পেয়েছে ২৬০ জন, মেডিসিন বিভাগে ৭৯২ জন এবং সার্জারি বিভাগে ১৮২ জন। ২৪ ঘণ্টায় সর্দি-কাশিতে ২৫৩ জন, নিউমোনিয়ায় ৪৬ জন, হাঁপানিতে ২৩ জন, স্ক্যাবিসে ১৫৩ জন, অন্যান্য চর্মরোগে ২২৩ জন এবং ডায়রিয়ায় ৫৪ জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে শিশু রোগীদের কষ্ট স্পষ্ট। তিন মাস বয়সী সুপ্তা জন্মের পর থেকেই ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে। গত অক্টোবরে সে টানা প্রায় ১৫ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। ছাড়পত্র পাওয়ার তিন দিনের মধ্যেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। দ্বিতীয়বার ভর্তির সময় তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তৃতীয় দফায় ভর্তি হয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ দিন হাসপাতালে রয়েছে সুপ্তা, এর মধ্যে কয়েক দিন তাকে আইসিইউতেও থাকতে হয়েছে।

নবজাতকরাও ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাঁচ দিনের শিশু আনাফকে সিজারিয়ান ডেলিভারির পর একটি শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মা জানান, জন্মের পর থেকেই শিশুটি ডায়রিয়ায় ভুগছিল। তিন দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর এখন তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং শিগগিরই ছাড়পত্র দেওয়ার কথা রয়েছে।

একইভাবে এ বছর বয়সী নুসাইবাকেও তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছে। তার মা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শিশুটি সর্দি ও নাক দিয়ে পানি ঝরার সমস্যায় ভুগছিল। খেতে চাইছিল না, সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছিল এবং শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাকে নেবুলাইজেশন দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে নল দিয়ে খাবার দেওয়া হলেও এখন অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মুখে খাবার নিতে পারছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের শিশু শ্বাসতন্ত্র (পালমোনোলজি) বিভাগের অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সরকার বলেন, শীতকালে শিশুদের মধ্যে ফ্লু, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তিনি বলেন, “এ সময়ে অভিভাবকদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “নিয়মিত গোসল প্রয়োজন হলেও অপরিণত নবজাতকদের ক্ষেত্রে দেরিতে ও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গোসল করানো উচিত, যাতে ঠান্ডা না লাগে। নবজাতকদের সব সময় গরম রাখতে হবে এবং যেসব শিশু খেতে পারে, তাদের বাইরে খোলা খাবার বা খোলা জুস দেওয়া যাবে না।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “অনেক অভিভাবক শিশুর নাক দিয়ে পানি ঝরার সময়ও প্যাকেটজাত পানীয় দেন। এতে অসুখ আরও বাড়তে পারে।”

চিকিৎসকরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিরুদ্ধেও সতর্ক করেছেন। ডা. প্রবীর কুমার সরকার বলেন, “শীতকালের বেশিরভাগ রোগই ভাইরাসজনিত। শিশুর জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।”

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বজুড়ে প্রতি ১৩ সেকেন্ডে একজন মানুষ নিউমোনিয়ায় মারা যান এবং প্রতি ৪৩ সেকেন্ডে মারা যায় একটি শিশু। শীতকালে শিশুদের অপ্রয়োজনে বাইরে নেওয়া থেকে বিরত থাকা, ধুলাবালি ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন



এ জাতীয় আরো খবর..
ইউটিউবে আমরা...
ফেসবুকে আমরা...