গাজায় ৭৬ বছর বয়সী আতাল্লাহ তারাজি ক্রিসমাসের কিছু উপহার পেয়েছেন। যার মধ্যে ছিল মোজা এবং ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি স্কার্ফ। তিনি কিছু ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রার্থনার গানও গেয়েছেন।
গির্জার অন্য সদস্যদের সঙ্গে তরাজি যখন গাইলেন—‘খ্রিস্টের জন্ম হয়েছে, হালেলুইয়া’ (একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ প্রভুর প্রশংসা), তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বিভীষিকা ঢাকা পড়েছিল বিশ্বাসের সুরে। তারাজি এবং গাজার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যান্যরা ধ্বংস ও অনিশ্চয়তার মাঝেও উৎসবের আনন্দ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
তিনি বললেন, ‘আমি মনে করি, খ্রিস্টের জন্মের আনন্দ আমাদের সব কষ্টের ওপর জয়লাভ করতে হবে।’
গাজার সেন্ট্রাল সিটি এলাকার ‘হলি ফ্যামিলি চার্চ’ কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া তরাজি বলেন, ‘আমরা এই পবিত্র মুহূর্তে যুদ্ধ, বিপদ আর বোমাবর্ষণের কথা ভুলে যেতে চাই। খ্রিস্টের জন্মের আনন্দ আমাদের সব তিক্ততাকে ছাপিয়ে যাক।’ তিনি দুই বছরের বেশি সময় ধরে হোলি ফ্যামিলি চার্চ কমপাউন্ডে আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে সবার জন্য উৎসবের অনুভূতি এক নয়। শাদি আবু দাউদের জন্য এবারের বড়দিনটি অত্যন্ত কষ্টের। গত জুলাই মাসে এই ক্যাথলিক চার্চ কম্পাউন্ডেই ইসরায়েলি হামলায় তার মা নিহত হন ও ছেলে আহত হয়।
ইসরায়েল এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এটিকে দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছিল। হামলার সময় আবু দাউদের পুত্র আহত হয়েছিল। অর্থোপডক্স খ্রিস্টান আবু দাউদ বলেন, তিনি ধর্মীয় আচার ও প্রার্থনার বাইরে কোনো উদযাপন করবেন না। তিনি বলেন, ‘কোনো উৎসব নেই। পরিস্থিতি কঠিন। ক্ষত এখনও আছে। যন্ত্রণা ও ব্যথা এখনো আছে। আমরা এখনো শান্তি ও অশান্তির মাঝামাঝি অবস্থায় বাঁচছি।’
অক্টোবর থেকে গাজায় শান্তি বিরতির পর ইসরায়েলের হামলা কিছুটা কমলেও মৃত্যুর ঘটনা পুরোপুরি থামেনি। ইসরায়েল ও হামাস একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ এখনো কার্যকর হয়নি।
আবু দাউদ বলেন, ‘আমি সব সময় আমার সন্তানদের বলি, ঈশ্বর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাদের কঠিন যুদ্ধই দেন। আমরা আমাদের খ্রিস্টান বিশ্বাস এবং দেশকে ধরে রেখেছি। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি।’ তিনি সতর্ক করেছেন, যুদ্ধ চলাকালীন অনেক খ্রিস্টান গাজা ত্যাগ করেছেন এবং সুযোগ পেলে আরো অনেকে চলে যেতে চাইছেন। তিনি খ্রিস্টান সম্প্রদায় এবং গাজার সামাজিক কাঠামোর ওপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
২৩ বছর বয়সী ওয়াফা ইমাদ এলসায়েঘ জানান, বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়রা না থাকায় আগের মতো আমেজ নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে সাজসজ্জা করছি ঠিকই, কিন্তু যাদের সঙ্গে সব আনন্দ ভাগ করে নিতাম, তারা আজ গাজায় নেই। এই পরিবেশ আগের মতো করে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’
৩৫ বছর বয়সী মা এলিনোর আমাশ তার সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ঘরে বড়দিনের গাছ (ক্রিসমাস ট্রি) সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানেরা কিছু চকলেট আর মিষ্টি পেয়ে বোমার ভয় ছাড়া শ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু তাঁঁবুগুলোতে বসবাসকারী মানুষের কষ্ট দেখে চোখে পানি আসে।’
গাজার খ্রিস্টানরা মনে করেন, তারা সংখ্যায় যত কম হোক না কেন, এটি এই ভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের এক অটল সাক্ষ্য। আত্তাল্লাহ তরাজি প্রার্থনা করেন যেন তার জাতি শান্তি ও স্বাধীনতা পায়। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পরিস্থিতির চেয়েও বড়দিনের আনন্দ এবং তাদের বিশ্বাস অনেক বেশি শক্তিশালী।
সূত্র : সিবিএস ১৭
এ জাতীয় আরো খবর..