অসহায় মানুষের শেষ ভরসার ঠিকানা হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের গণশুনানি। চিকিৎসা ব্যয়, পড়াশোনার অনিশ্চয়তা কিংবা জীবনের কঠিন সংকটে যখন সব দরজা বন্ধ হয়ে আসে, তখন এই গণশুনানিই হয়ে উঠছে অনেকের আশার আলো।
সবশেষ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) অসুস্থ এক শিক্ষক ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়া এক শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার নজির রাখলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার গণশুনানিতে হাজির হন বাঁশখালী উপজেলার খুদুকখালী গ্রামের স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
তিনি জানান, গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চান্দগাঁও থানাধীন শমসেরপাড়া এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকদের পরীক্ষায় তার কিডনি, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। স্ট্রোকের কারণে তার বাম পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে এবং বর্তমানে নিয়মিত থেরাপি নিতে হচ্ছে।
চিকিৎসকদের মতে, স্ট্রোকের প্রভাবে তার গলার খাদ্যনালি ও ফুসফুসে গুরুতর আঘাত লাগে। ফলে প্রায় এক মাস ধরে নাকের মাধ্যমে নল বসিয়ে তরল খাবার গ্রহণ করতে হচ্ছে। দীর্ঘ ৮–৯ বছর ধরে শিক্ষকতা করা আবুল কালাম পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার অসুস্থতায় চিকিৎসা ব্যয় ও দুই কলেজপড়ুয়া ছেলের পড়াশোনা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
তার বক্তব্য শুনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এ সময় আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডিসি স্যারের ব্যবহার অত্যন্ত অমায়িক। তাকে একজন প্রকৃত মানবিক মানুষ মনে হয়েছে।
এদিন একই গণশুনানিতে হাজির হন কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর গ্রামের শিক্ষার্থী কে এম জয়নাল আবেদীন। তিনি জানান, তার পিতা ইসহাক আহমেদ বারী স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় পিতার চিকিৎসা ও সংসারের ব্যয় বহন করা পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় থাকা জয়নালের উচ্চশিক্ষা অনিশ্চয়তায় পড়ে।
জয়নালের কথা শুনে জেলা প্রশাসক তাকেও তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেন এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত জয়নাল বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানবিক ডিসির কথা শুনেছিলাম, আজ নিজে তার প্রমাণ পেলাম।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, একজন শিক্ষক শুধু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারবেন না—এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। পাশাপাশি একজন মুয়াজ্জিনের চিকিৎসা ও তার সন্তানের উচ্চশিক্ষা যেন অর্থাভাবে থেমে না যায়, সেটিও আমাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, সরকারি বাজেট সীমিত হলেও চেষ্টা থাকে যেন কোনো অসহায় নাগরিক জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পুরোপুরি নিরাশ হয়ে ফিরে না যান।
এ জাতীয় আরো খবর..