গাজা উপত্যকায় প্রতিটি নিঃশ্বাস আজ টিকে থাকার এক করুণ
সংগ্রাম। ইহুদি দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের নির্মম অবরোধে ফিলিস্তিনিরা যেন
জীবন্ত কবরের মাঝে আটকে পড়া আত্মা। ক্ষুধার করাল গ্রাসে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে
একটি প্রজন্ম। কিন্তু সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য হলো, অপুষ্টিতে কঙ্কালসার
শিশুগুলো আর কাঁদতেও পারছে না। অপুষ্টি তাদের হাড় গিলে খেয়েছে,ক্ষুধা যেন
তাদের শ্বাস থামিয়ে দিয়েছে। ফিলিস্তিনি শিশুরাই কেবল নয়, বয়স্করাও ক্ষুধার
যন্ত্রণায় কাঁদছে। এ যেন মানবতার চরম পরাজয়ের চিত্র!গাজায় মৃত্যুর কারণ
আর বোমা নয়, এখন মৃত্যু আসছে খিদের ছুরিতে। ইসরায়েলি অবরোধ শুধু গাজাকে
আটকে দেয়নি, তারা থামিয়ে দিয়েছে খাবার, পানি, ওষুধ, থামিয়ে দিয়েছে মানবতার
ন্যূনতম অধিকার। আর তাই গাজায় প্রতিদিন বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা, আর
সেইসঙ্গে বাড়ছে লাশের মিছিল। বয়স্করাও আর সহ্য করতে পারছে না। একজন পিতা,
যিনি নিজের ছেলেমেয়েকে একসময় বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতেন, আজ তিনি নিজেই ক্ষুধায়
বাচ্চার মতো কাঁদছেন। মৃত্যু আর ক্ষুধার এই অমানবিক প্রতিযোগিতায় প্রাণ
হারিয়েছেন ৪২২ জন!
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি
বাহিনীর অভিযানে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৫৩ ফিলিস্তিনি। গাজা সিটির বুক চিরে
ধসে পড়েছে ১৬টি ভবন। তিনটি ছিল মানুষের বসবাসের শেষ আশ্রয়। এসব ধ্বংস শুধু
ইট-পাথরের ওপর নয়, সরাসরি মানবতার ওপর চালানো আঘাত। উত্তর গাজার জনগণকে
উচ্ছেদ করতে চালানো এই নিষ্ঠুর আক্রমণের ফাঁকেই ক্ষুধা আর অপুষ্টিতে নিঃশেষ
হলো আরও দুইটি জীবন। একদিকে বোমা, অন্যদিকে অভুক্তর মৃত্যু, গাজা যেন
ধ্বংস আর হাহাকারের এক ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
এদিকে, অবিরাম হামলায় পরিবারগুলো আবারও দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসির দিকে
পালাচ্ছে। তবে, যে আল-মাওয়াসিরকে বলা হয়েছিল নিরাপদ, সেই জায়গায় নেই পানি,
নেই টয়লেট, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। খোলা আকাশই এখন ছাদের নামান্তর। শিশুদের
চোখে ঘুম নেই, পেটে খাবার নেই, কাঁধে ক্লান্তি আর অনিশ্চয়তার বোঝা।
অপুষ্টিতে কাবু ছোট ছোট শিশুগুলোকে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাতে সবাই তাকিয়ে আছেন
একটি নতুন তাঁবুর আশায়। কারণ, আসন্ন শীত যে আরও নির্মম, আরও ভয়াবহ!