×

  • নিউজ ডেস্ক

    প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৪-১২-০৭, সময় - ১২:০১:০৬

এক সময় ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় ছিল এটি। এই বাণিজ্যকেন্দ্রের আধিপত্য ছিল দেশজুড়ে। এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই চলে যাচ্ছে অভিজাত গুলশান এলাকায়। এখানকার একাধিক ভবন মালিক জানিয়েছেন, কম ভাড়াতেও ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা রাজধানী ঢাকার এক সময়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের।

এটি এখন ঐতিহ্য হারিয়ে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ছে। মতিঝিলের পূবপ্রান্তে টিকাটুলি এলাকার ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিলের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বরের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া দিলকুশা সড়ক ও সোজা পশ্চিমপ্রান্তের আরামবাগ-ফকিরের পুল ও নয়া পল্টন এলাকার কথা ধরা যেতে পারে। এখানে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার একপাশে অন্তত ৪০টি বাণিজ্যিক ভবন। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২২টিতে এখন ‘টু-লেট’ ঝুলছে। অথচ, এমন সময় ছিল যখন মতিঝিলে জায়গা পাওয়া ছিল ‘অনেক টাকার’ বিষয়।

মোগল সাম্রাজ্যের সময় থেকেই মতিঝিল এলাকার নাম শোনা যায়। এই এলাকাটি সেই সময় মির্জা মোহাম্মদের মহল হিসাবে গন্য হতো, যার মধ্যে ছিল একটি পুকুর। শুরুতে সুকাকু মহলের পুকুর হিসাবে খ্যাত হলেও পরে এই পুকুরটি মতিঝিল নামে পরিচিত হয়ে উঠে, এবং এর নামানুসারেই এলাকাটির নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে এই এলাকা ঢাকার নবাব পরিবারের সম্পত্তিতে পরিণত হয়। নবাব আবদুল গনির সময়ে এখানে বাগান স্থাপন করা হয়। এই এলাকাতে নবাব পরিবারের বাগানবাড়িও নির্মিত হয়। কিন্তু আজ সেসবই ইতিহাস। আর এখন রাজধানীর সবচেয়ে প্রাণবন্ত ব্যবসাকেন্দ্র যেন জৌলুসহীন।

অনেক বাণিজ্যিক ভবন গত পাঁচ বছর ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। নতুন ভাড়াটিয়া পায়নি। এ ছাড়াও, এখনো সেখানে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক আছে সেগুলো নতুন ঢাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী ও বারিধারার দিকে চলে যাচ্ছে।

নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মতিঝিলে শাখা রাখতেও নারাজ। উদাহরণ হিসেবে মতিঝিলের আদমজী কোর্ট এনেক্স বিল্ডিং-২ এর কথা ধরা যায়।

একসময় ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া এই ১২ তলা ভবনটি ছিল কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর।

২০২০ সালে করোনা মহামারির পর ব্যাংকটি পর্যায়ক্রমে এর প্রধান কার্যালয় গুলশানে সরিয়ে নেয়। এখন ভবনটির অধিকাংশই ফাঁকা। দিনের আলোতেও অন্ধকারাচ্ছন্ন।

আদমজী কোর্ট থেকে প্রায় ১৫ মিনিটের হাঁটা পথে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এনেক্স ভবনেও একই দৃশ্য। সম্প্রতি সেখানে দেখা যায়, ১১ তলা ভবনটি দুপুর ১টায় নিস্তব্ধ। লিফটে দু-তিনজনের দেখা মেলে। কয়েক বছর আগেও তা ছিল কল্পনার বাইরে।

২০১০ এর দশকে যখন ভবনটিতে স্টক ব্রোকারেজ অফিস অনেক ছিল, তখন লিফটে উঠতে লাইনে দাঁড়াতে হতো। ১৯৫৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএসইর সব কাজ এখানে হতো।

শেয়ার লেনদেনের সময় ওই ভবনটির সামনে এত জনসমাগম হতো যে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় থাকতো না। এখন দিনের মাঝামাঝি সময়েও তা প্রায় জনশূন্য।

ঢাকার উত্তরাঞ্চল নিকুঞ্জে নিজস্ব ভবনে অফিস সরিয়ে নেওয়ার পর ডিএসইর পুরোনো ভবনটিতে হাজার হাজার বর্গফুট জায়গা খালি পড়ে আছে।

দুটি ব্রোকারেজ হাউস ও একটি বিমা প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে সরিয়ে নতুন জায়গায় নেওয়ার ঘোষণা গ্রাহকদের দিয়ে রেখেছে।

দিলকুশার সুদৃশ্য জীবন বীমা টাওয়ারেও একই চিত্র। ১৯৯০ এর দশক থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এখানে ছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন



এ জাতীয় আরো খবর..
ইউটিউবে আমরা...
ফেসবুকে আমরা...