×

সর্বশেষ :

  • নিউজ ডেস্ক

    প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৫-০৮-২০, সময় - ০৪:৪০:০৭
খুব শিগগিরই দেশের সব জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিসি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই নতুন ডিসিদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার ডিসি নিয়োগে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সুবিধাভোগী বা বিতর্কিত কর্মকর্তাকে স্থান দেওয়া হবে না। কেউ ছলচাতুরী বা তথ্য গোপন করে ডিসি পদে নিয়োগ পেলে এবং পরে তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে গত ১৮ আগস্ট সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ পেয়েছেন প্রশাসনের আলোচিত সেই ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা সারওয়ার আলম বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফিটলিস্ট প্রস্তুত প্রক্রিয়া
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে ছয় ধাপে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের ২৬৯ জন উপসচিবের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্য থেকে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে ফিটলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষা চলছে।
জনপ্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১২ জন কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে রয়েছেন। তবে ২৪তম ব্যাচের ২১ জন কর্মকর্তা গত ২০ মার্চ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও এখনও মাঠ প্রশাসন থেকে তাদের প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি।
পূর্বের বিতর্ক ও বর্তমান সতর্কতা
এর আগে ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ১০৮ জন কর্মকর্তার একটি ফিটলিস্ট থেকে ৬১ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়োগ নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অনেক কর্মকর্তা নিজেদের ‘বঞ্চিত’ দাবি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে, যা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছিল।
তাছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধা পাওয়া একাধিক কর্মকর্তা গত বছরের ৫ আগস্টের পরও ডিসি পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এসব নিয়ে সমালোচনার পর এবার সরকার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে।
প্রশাসনে অস্থিরতা ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ
নিয়োগে কমিটি
তিনি বলেন, ‘এ আমলাতন্ত্রের ওপর ভর করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সত্যিই অসাধ্য। তাই এখনো সময় আছে প্রশাসনের প্রাণ ফিরে আনতে হবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও ডিসি সহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যোগ্য ও দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে হবে।’
‘১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। বর্তমান প্রশাসনের দুর্বলতা দ্রুত সমাধান করতে হবে। একটি সৎ, দক্ষ ও পেশাজীবী আমলাতন্ত্র ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। এখনো সময় আছে—সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে।’
সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন,
বিশেষজ্ঞ মতামত
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস-উর রহমান বলেন, ‘ডিসি ফিটলিস্ট থেকেই নিয়োগ দেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ) মো. এরফানুল হক বলেন, ‘ডিসি নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কবে নাগাদ নিয়োগ হবে তা জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা আশা করছি দ্রুতই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।’
জনপ্রশাসনের অবস্থান
তাদের মতে, এক দশক বা দেড় দশক আগে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারা বর্তমানের ডিজিটাল প্রশাসন ব্যবস্থায় খাপ খাওয়াতে পারছেন না। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সাহস পান না। এর ফলে প্রশাসনে শৃঙ্খলার অভাব দেখা দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
কেবল ডিসি নিয়োগই নয়, বর্তমানে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নেই এবং ভারপ্রাপ্ত সচিব দিয়ে চলছে। কর্মকর্তাদের দাবি, প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাজনিত বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য চারজন উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবকে নিয়ে ‘জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিই ডিসি নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন



এ জাতীয় আরো খবর..
ইউটিউবে আমরা...
ফেসবুকে আমরা...