নারীদের মতো পুরুষদের মধ্যেও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা একটি বাস্তব সমস্যা। তবে বিষয়টি তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত এবং অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্ব পায় না।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, পুরুষদের মধ্যে হরমোনজনিত সমস্যা, বিশেষ করে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়ার প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে কম বয়সেই টেস্টোস্টেরন হ্রাস, পুরুষদের প্রজননক্ষমতা কমে যাওয়া, যৌন আগ্রহ ও কর্মশক্তি হ্রাসের মতো সমস্যায়।
এ কারণে টেস্টোস্টেরন ভারসাম্যহীনতার প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা এবং সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
পুরুষদের হরমোন ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ ও উপসর্গ
পুরুষদের হরমোন বা টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির কয়েকটি প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে। এগুলো হলো—
যৌন আগ্রহ কমে যাওয়া
পুরুষদের যৌন আকাঙ্ক্ষা ও সক্ষমতার সঙ্গে টেস্টোস্টেরনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এই হরমোনের মাত্রা কমে গেলে যৌন আগ্রহ কমে যেতে পারে। যৌন সম্পর্কে আগ্রহ হ্রাস পাওয়া কিংবা ইরেকশন ধরে রাখতে সমস্যায় পড়লে তা টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
অতিরিক্ত ক্লান্তি ও শক্তির অভাব
টেস্টোস্টেরন পুরুষদের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই হরমোনের ঘাটতি হলে পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রামের পরও ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। অল্প কাজেই অবসন্ন লাগা বা সারাদিন শক্তিহীন মনে হওয়াও এর লক্ষণ।
পেশি কমে যাওয়া ও শক্তি হ্রাস
শরীরের পেশি গঠন ও ধরে রাখতে টেস্টোস্টেরন অপরিহার্য। এর মাত্রা কমে গেলে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শক্তি কমতে শুরু করে। নিয়মিত কাজ বা ব্যায়ামে আগের মতো শক্তি না পাওয়া বা পেশির আকার ছোট হয়ে যাওয়াও সতর্ক সংকেত হতে পারে।
মেজাজের পরিবর্তন
টেস্টোস্টেরন মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও জড়িত। এই হরমোন কমে গেলে মুড সুইং, অতিরিক্ত বিরক্তি বা হতাশা দেখা দিতে পারে। অকারণে রেগে যাওয়া, মন খারাপ থাকা বা বিষণ্নতায় ভোগাও টেস্টোস্টেরন ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে।
শরীরের চর্বি বৃদ্ধি
টেস্টোস্টেরন শরীরে চর্বি বণ্টন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এর ঘাটতি হলে বিশেষ করে পেটের চারপাশে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার ও ব্যায়াম সত্ত্বেও পেটের চর্বি বাড়তে থাকলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।
টেস্টোস্টেরন কমে গেলে করণীয়
উল্লেখ্য, এসব উপসর্গ শুধু টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার কারণেই নয়; অন্য সমস্যার কারণেও দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সমস্যার কারণ ও মাত্রার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত ঘুম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক। সুস্থ জীবনের শুরুটা হয় স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল থেকেই—যা অনেক সময় আমরা উপেক্ষা করি।
ওষুধ
কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে এমন ওষুধ দেওয়া হতে পারে, যা শরীরে টেস্টোস্টেরন উৎপাদন বাড়াতে বা টেস্টোস্টেরন থেকে ইস্ট্রোজেনে রূপান্তর কমাতে সাহায্য করে।
সাপ্লিমেন্ট
ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং শিলাজিৎ, অশ্বগন্ধা, সাফেদ মুসলি, মেথি (ফেনুগ্রীক)–জাতীয় ভেষজ উপাদানসমৃদ্ধ কিছু সাপ্লিমেন্ট টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এগুলো নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ৩–৪ মাস গ্রহণ করতে হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চালিয়ে যেতে হয়।
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অত্যন্ত কমে গেলে বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেওয়া হয়। ইনজেকশন, জেল, প্যাচ বা পেলেটের মাধ্যমে শরীরে টেস্টোস্টেরন সরবরাহ করা হয়। তবে এটি শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শেই গ্রহণযোগ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের হরমোনজনিত সমস্যার চিকিৎসা অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুরুষদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া, খোলামেলা আলোচনা করা এবং প্রয়োজন হলে সময়মতো চিকিৎসা ও পরামর্শ গ্রহণ করা।
সূত্র : দ্য হেলথ সাইট
এ জাতীয় আরো খবর..