×


  • নিউজ ডেস্ক

    প্রকাশ :- ২০২৫-১২-২৪, | ১৯:৪৪:৫৮ |
ঠান্ডা লাগলেই গলা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া কিংবা কাশির যন্ত্রণায় আমরা অনেকেই প্রথমে ওষুধের দিকে না গিয়ে খুঁজি ঘরোয়া সমাধান। ঠিক তখনই মনে পড়ে যায় আদা চা, আদা–মধুর মিশ্রণ কিংবা কাঁচা আদার ছোট টুকরো। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আদা ব্যবহার হয়ে আসছে সর্দি–কাশি ও গলা ব্যথা কমাতে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আদা কি সত্যিই সর্দি সারাতে পারে, বিজ্ঞান কী বলছে?   

সর্দি কি আদায় সারে

সরাসরি বলা যায়, আদা একা সর্দি পুরোপুরি সারিয়ে দিতে পারে এমন নিশ্চিত প্রমাণ এখনো নেই। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, আদা সর্দি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে এবং সর্দির উপসর্গ অনেকটাই কমাতে সক্ষম। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী আদা—

সর্দি হওয়া প্রতিরোধ করতে পারে
গলা ব্যথা প্রশমিত করতে সাহায্য করে
ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে
তবে এসব উপকারিতা নিশ্চিত করতে আরও বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

আদার ঔষধি গুণাগুণ
আদাতে জিঞ্জেরল এবং শোগাওল নামক যৌগ থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই উপাদানগুলোই আদাকে প্রাকৃতিক ওষুধে পরিণত করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে আদার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে:

১. অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ

আদায় থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক যৌগ ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে কাজ করে। ফলে শরীরে জীবাণুর বংশবিস্তার কমাতে সাহায্য করে, যা সর্দির উপসর্গ তৈরি করে।
 
২. অ্যান্টিভাইরাল ক্ষমতা

ল্যাব গবেষণায় দেখা গেছে, আদার শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, আদা ও রসুন একসঙ্গে ব্যবহার করলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতা আরও বেড়ে যায়।

৩. প্রদাহনাশক 

গলা সংক্রমণের ক্ষেত্রে আদা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এতে গলার পেছনের অংশের প্রদাহ বা ফ্যারিঞ্জাইটিস কমে, ফলে গলা ব্যথা উপশম হয়।

৪. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ

আদায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শুকনো আদায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তুলনামূলক বেশি সময় ধরে সংরক্ষিত থাকে।

গলা ব্যথা বা সর্দিতে আদা যেভাবে ব্যবহার করবেন 

ঝাঁঝালো স্বাদ ও উষ্ণ অনুভূতির জন্য আদা গলা ব্যথায় বেশ আরাম দেয়। ব্যবহার করতে পারেন নানা উপায়ে—

গরম পানিতে কুচানো আদা ও লেবু মিশিয়ে চা বানিয়ে
কাঁচা আদার ছোট টুকরো চিবিয়ে
রান্নায় বা স্যুপে আদা যোগ করে
জুস বা স্মুদিতে আদা মিশিয়ে
নারকেল পানির সঙ্গে ব্লেন্ড করে ‘আদা শট’ বানিয়ে
এছাড়াও আদা ক্যাপসুল, লজেন্স বা ট্যাবলেট আকারেও পাওয়া যায় যারা আদার স্বাদ পছন্দ করেন না, তাদের জন্য এটি সুবিধাজনক।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুযায়ী, খাবার ও পানীয় হিসেবে আদা নিরাপদ। তবে সাপ্লিমেন্টের ক্ষেত্রে মান ও বিশুদ্ধতা ভিন্ন হতে পারে। যাদের কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে, ওষুধ খান বা যাঁরা গর্ভবতী তাদের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, মধুর নিজস্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ আছে। আদার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে এই প্রভাব আরও শক্তিশালী হয়।

আদা সর্দির জাদুকরী চিকিৎসা না হলেও, এর প্রাকৃতিক গুণাগুণ সর্দি–কাশি ও গলা ব্যথার উপসর্গ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও প্রদাহনাশক বৈশিষ্ট্যের কারণে আদা বহুদিন ধরেই ঘরোয়া চিকিৎসায় জনপ্রিয়। নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে আদা শরীরকে আরাম দিতে পারে, তবে গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।

নিউজটি শেয়ার করুন



এ জাতীয় আরো খবর..
ইউটিউবে আমরা...
ফেসবুকে আমরা...