কিয়ামতের দিন কোরআন মানুষের ঈমানের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। দুনিয়ায় আল্লাহর কাছে মর্যাদা বাড়াবে এবং জান্নাতে প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে মর্যাদা দেবেন আল্লাহ। তাই কোরআন বোঝা ও পড়া প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।
কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ কেন?
কোরআন তিলাওয়াত ও কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা ও জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা দুনিয়া ও আখিরাতে অসংখ্য কল্যাণ বয়ে আনে। কোরআনের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার পেছনে কয়েকটি মৌলিক কারণ রয়েছে।
কোরআন পড়া একটি ফরজ দায়িত্ব
আবু রুকাইয়াহ তামীম বিন আওস দারী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দ্বীন হল কল্যাণ কামনা বা আন্তরিকতার নাম। আমরা বললাম, ’কার জন্য?’ তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার রসূলের জন্য, মুসলিমদের শাসকদের জন্য এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য। (মুসলিম)
আল্লাহর কিতাবের প্রতি আন্তরিকতার অর্থ হলো, নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা, তাজবিদ শিখে সুন্দরভাবে পড়া, তাফসির জানা এবং নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট বোঝার চেষ্টা করা।
একই সঙ্গে বিশ্বাস করা যে কোরআন আল্লাহর বাণী, এটি অন্য কারো সৃষ্ট নয়, বরং চিরন্তন সত্য। কোরআনের আদেশ–নিষেধ মেনে চলা, অন্যদের শেখানো এবং তার দিকে মানুষকে আহ্বান জানানোও এই দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
অতএব নিয়মিত কোরআন পড়া ও তা নিয়ে চিন্তা করা ইবাদত এবং এর জন্য আল্লাহ বিশেষ প্রতিদান দেন।
কিয়ামতের দিন কোরআন হবে সাক্ষী
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ হবে। (মুসলিম)
অর্থাৎ, যে কোরআনকে সামনে রাখবে, তা তাকে জান্নাতের পথে নিয়ে যাবে। আর যে কোরআনকে পেছনে ফেলবে, তা তাকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেবে।
এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কোরআনের সঙ্গে কী আচরণ করছি? আমরা কি অবহেলা করছি, আদেশ অমান্য করছি, নাকি গভীরভাবে চিন্তা করছি?
আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, কোরআন যেন কিয়ামতের দিন আমাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়, বিপক্ষে নয়।
আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআন সুপারিশকারী। যার জন্য সুপারিশ করা হয়, তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য। যে কোরআনকে সামনে রাখে, তা তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়; আর যে পেছনে রাখে, তা তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। (তাবারানি)
দুনিয়াতেও মর্যাদা বৃদ্ধি করে কোরআন
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত এক ঘটনায় দেখা যায়, খলিফা ওমর (রা.) মক্কার শাসক হিসেবে একজন মুক্তদাসকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এতে আপত্তি উঠলে তিনি বলেন, তিনি আল্লাহর কিতাবের পাঠক এবং দ্বীনের বিধান সম্পর্কে জ্ঞানী।
এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর বাণী স্মরণ করিয়ে দেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এই কিতাবের মাধ্যমে কিছু লোককে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন এবং কিছু লোককে অবনমিত করেন। (সহিহ মুসলিম)
জান্নাতে উচ্চ মর্যাদার চাবিকাঠি
হজরত উসমান (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়। (বুখারি)
আরেক হাদিসে এসেছে, কোরআনের সঙ্গীকে বলা হবে, পড়ো এবং জান্নাতের স্তরে স্তরে উপরে ওঠো। দুনিয়ায় যেভাবে সুন্দর করে পড়তে, সেভাবেই পড়ো। জান্নাতে তোমার স্থান হবে শেষ যে আয়াতটি তুমি তিলাওয়াত করবে, সেখান পর্যন্ত। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
শেষ কথা
একজন মুসলমানের জন্য কোরআন পড়া অপরিহার্য। বোঝার চেষ্টা করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আরবি তিলাওয়াতে বিশেষ বরকত রয়েছে। সবচেয়ে উত্তম হলো, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা, যেমন ফজরের পর। আরবি পড়ার পাশাপাশি মাতৃভাষায় অনুবাদ পড়াও জরুরি। পাশাপাশি কোনো আলেম বা কোরআন অধ্যয়ন চক্রের সঙ্গে যুক্ত হলে বোঝাপড়া আরও গভীর হয়।
কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক শুধু ইবাদতের নয়; এটি দুনিয়ার পথচলা ও আখিরাতের মুক্তির দিশারি।
এ জাতীয় আরো খবর..