সংঘাতের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।
সোমবার (১ আগস্ট) সকাল ৯ টার মধ্যে হল ত্যাগ করার নির্দেশও দেয়া হয়।
নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সোমবার সকাল থেকে ছাত্রীদের হলগুলো থেকে অনেকেই
বাড়ির পথে রওনা হয়। তবে ছাত্রদের কাউকে হল ছাড়তে দেখা যায়নি।
এদিন সকাল ৯ টার দিকে হল ছাড়ার নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায়
নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ছাত্র হল থেকে খন্ড খন্ড
মিছিল নিয়ে এসে ক্যাম্পাসের কে.আর মার্কেটের সামনে এসে জড়ো হন। তারা
বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার বিচার দাবি ও হল
ছাড়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।
এরপর সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সংবাদ সম্মেলন করেন
শিক্ষার্থীরা। এতে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং সোমবার দুপুর ২টার মধ্যে এ
দাবিগুলো মেনে নেয়ার আলটিমেটাম দেন।
ছয়দফা দাবিগুলো হল-
১. অবৈধভাবে হল ভেকেন্টের নির্দেশনা দুপুর ২ টার মধ্যে প্রত্যাহার করে আদেশ তুলে নিতে হবে।
২. হলগুলোতে চলমান সব ধরনের সুবিধা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
৩. এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায়
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর শিক্ষকদের মদদে বহিরাগত দিয়ে হামলার
দায়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।
৪. বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা
ভাঙচুর এবং দেশিয় অস্ত্র দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং নারী
শিক্ষার্থীদের হেনস্থার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৫. হামলার সাথে জড়িত শিক্ষকবৃন্দ- কৃষি অনুষদের আসাদুজ্জামান সরকার,
তোজাজ্জল স্যার, শরীফ আর রাফি স্যার, কামরুজ্জামান স্যার, পশুপালন অনুষদের
বজলুর রহমান মোল্লা; জেনেটিক্স এর মুনির স্যার; ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের
আশিকুর রহমান স্যার এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির
ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. গত এক মাস ধরে চলমান যে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন করে
আসছি, সেই একক ডিগ্রি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে। তিনটি ভিন্ন ডিগ্রি
কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বেশ কিছুদিন ধরে ভেটেরিনারি অনুষদ এবং পশু পালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা
কম্বাইন্ড ডিগ্রীর দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। রোববার (৩১ আগস্ট)
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক চলছিলে।
দুপুরে পর কম্বাইন ডিগ্রির পাশাপাশি ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের আলাদা
ডিগ্রি চালু রাখার সিদ্ধান্ত জানালে আন্দোলনরত দুই অনুষদের ক্ষুব্ধ
শিক্ষার্থীরা মিলনায়তনে তালা দিলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ভিসিসহ দুই শতাধিক
শিক্ষক।
এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার আন্দোলনরত
শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে ব্যর্থ হয়। সাড়ে ৭ টার দিকে হঠাৎ বহিরাগত
একদল যুবক লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর। এতে
সাংবাদিক-শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এ ঘটনার জেরে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাস। উদ্ভুত পরিস্থিতি
এড়াতে রাতেই অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববাদ্যালয়। সোমবার
সকাল ৯ টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ জাতীয় আরো খবর..